কৃষকের পরামর্শ নিয়ে বাঁধ নির্মাণ হবে : জেলা প্রশাসক
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত
- আপলোড সময় : ২২-০৯-২০২৪ ১১:০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৯-২০২৪ ১১:০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে শপথগ্রহণ ও অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নবাগত জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাড. শহীদুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ স¤পাদক বিজন সেন রায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, সহ-সভাপতি অলিউর রহমান বকুল, সহ-সভাপতি অ্যাড. আসাদুল্লাহ সরকার, নেত্রকোণা জেলার সাংগঠনিক স¤পাদক মো. মোনায়েম খান, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক এ কে কুদরত পাশা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল হক মিলন, অর্থ স¤পাদক কলি তালুকদার আরতি, প্রচার সম্পাদক শহীদনূর আহমেদ, কার্যকরী সদস্য নির্মল ভট্টাচার্য্য, জামালগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহানা আল আজাদ, তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব হোসাইন শরীফ বিপ্লব, যুগ্ম আহ্বায়ক তোজাম্মিল হক নাসরুম, শান্তিগঞ্জ উপজেলার নজরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হাসান বশির, জেলা কমিটির সাংগঠনিক স¤পাদক সামছুল ইসলাম সর্দার, নেত্রকোণা জেলার মাইদুল খান, রাধিকা রঞ্জন তালুকদার, দিরাইয়ের নুরুল আজিজ, মিজবাহ উদ্দিন, আব্দুল হাই।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ কাজে নীতিমালা মানা হয় না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে কোনো গণশুনানী হয় না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে বসে পিআইসি গঠন করা হয়। এতে প্রকৃত কৃষকেরা বাদ পড়ে। এসব কারণে হাওরের বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। দিনে দিনে এই দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলেছে।
বক্তারা আরও বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে এখন বাঁধের সংখ্যা অনেকটা বেশি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে জেলায় সোয়া ৪শত বেড়িবাঁধের পরিবর্তে এখন প্রায় সাড়ে ৮শত বেড়িবাঁধ সৃজন করা হয়েছে। তারা বলেন, এসব দুর্নীতির কারণে বেড়িবাঁধে সাড়ে ৬ কোটি টাকার পরিবর্তে এখন ১৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বক্তারা বলেন, বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্যকে ছোট ছোট আকারে বিভক্ত করে আলাদা আলাদা পিআইসি গঠন করে বিপুল পরিমাণের বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এভাবে বেড়িবাঁধ ভাগাভাগি করে অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে সারা জেলায়। এসব দুর্নীতির জন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠে কাজ করে থাকা দুর্নীতিবাজ পুরাতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বক্তারা আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যেসব পুরাতন কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন তারা প্রতি বছর একাধিক বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজে কৃষকদের সাথে শেয়ার থাকেন। এতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদের কর্মস্থল রদবদল করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জেলায় এখন অপ্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ সৃজন করা একটি জমজমাট ব্যবসা শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্ভে করে তাদের ইচ্ছে মতো বাঁধের সংখ্যা বাড়ায়, পিআইসির সংখ্যা বাড়ায়। একই সাথে বরাদ্দের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তদন্ত ছাড়াই এসব পিআইসির বেড়িবাঁধ অনুমোদন হয়ে যায়। হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনকে স¤পৃক্ত করা হয়নি বা কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। এভাবেই বাঁধের কাজে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে তাই আগে থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা ২০১৭ সাল থেকে পিআইসি নিয়ে কাজ করে আসছি। তিনি দাবি করেন, বাঁধের কাজ হাওর বাঁচাও সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে পরামর্শ করে অনুমোদন দেয়া হয়। তিনি বলেন, উপজেলা থেকে পিআইসি গঠন করে আমাদের জেলা মনিটরিং কমিটিতে পাঠানো হয়। পরে অনুমোদন হয়।
তিনি আরও বলেন, এখন বাঁধ মেরামতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। বাঁধ সংক্রান্ত যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই আমার কাছে জানাবেন। আমি গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখবো।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমি শুনেছি এখানকার পিআইসি নিয়ে চালাকী হয়। সবাই চায় পিআইসি। আসলে পিআইসি পাবে ওই হাওরে থাকা জমির কৃষকেরা। কৃষক তার ফসলরক্ষা করতে কীভাবে বেড়িবাঁধ হবে তা সে ভাল বুঝে। কৃষকের পরামর্শ নিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর জলে টাকা ফেলছি আমরা। এটাকে সকলে মিলে স্থায়ী কিছু করার চিন্তা করতে হবে। আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের জন্য সকলে মিলে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা যারা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে আছি, আমরা আপনাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে চাই।
অনুষ্ঠানের আগে শহরে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ